Showing posts with label kolkata. Show all posts
Showing posts with label kolkata. Show all posts

Friday, 13 June 2014

মন খারাপের মল্লার



কৈরালী বর্ষায় ভেজা দুপুরগুলো পুরনো চিঠির মতো। কারুকাজ করা বাক্সে বন্দি করে রাখতেই ভালো লাগে।মাঝে মাঝে উল্টে পাল্টে দেখব যখন তখন কি এক আধটা চ্যাপ্টা গোলাপ দেখতে পাব ?মনে হয় না। 

এই বৃষ্টিটাই যদি একটা খোলা বারান্দায় টিনের চালে তার তালবাদ্য শোনাত আমি বেশি খুশি হতাম। কেরালার বর্ষা তার রূপের গুমর যতই থাকুক না কেন , আমি এখনো কলকাতার প্যাচপ্যাচে ইলশেগুড়ি বা মুষলধারার দলে।  সেই কবে সাইকেল রাস্তার মাঝে কোচিং ফেরত দাড়িয়ে ঝুপ ঝুপ করে ভেজা, অথবা স্কুলের মাঠে হটাত বৃষ্টিতে যতটা সম্ভব আসতে হেটে ভিজে যাওয়া আমাকে এই অবেলায় নস্টালজিক করে দেয়। 

এই বর্ষায় ভালো লাগত সাথে যদি খিচুড়ী  আর ডিমভাজা আর  সাথে মায়ের বকুনি (টুপুর সারা বাড়িটা জলময় করে দিলি!!) ফাউ পাওয়া যেত।  আমাদের নন্দন কাননের বাড়ির সামনে একটা লম্বা বারান্দা ছিল।  যেহেতু সেখানকার নন্দনেরা  সংখ্যায় অতি  নগন্য এবং বই মুখো ছিল , নন্দিনিদের দেদার বৃষ্টিতে ভেজায় মানা ছিল না। 
  মজার ব্যাপার, বাবা আমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখলে কোনদিন বকেননি, কেন জানিনা মনে হয় আমার আপাত গম্ভীর বাবার মধ্যে কথাও একটা দুষ্টুমির জিন প্রছন্ন ছিল,যার প্রকাশ আমার মধ্যে দেখে উনি খুশি ই হতেন। এমন বর্ষায় সবাই বেপথে যায়, আমার সরস্বতী  বোনের  চোখের সামনে থেকে খাতার পাহাড় যেত সরে, চুপটি করে এসে দাড়াত বারান্দায়, ঠোটে এক চিলতে হাসি। ওদিকে কুন্ডু বাড়ির দোতলার বারান্দায় শান্ত শিষ্ট মনি, স্বাতীর চিত্কার, "টু-পু-র ভিজচিস!!" অথবা নিচের থেকে রিমা রেশমি, "বড়দিদি। .." সেসব ডাক দূর থেকে আমাকে আজও নবম শ্রেণীতে ফেরত পাঠায়! যাহ, হটাত উমাকাকিমার  কাশ্মীরি আলুর দমের জন্য মন তা হু হু করে উঠলো!! 

উপরের সবাইকে নিয়ে আমি একটি আস্ত বই লিখতে পারি। এর মধ্যে আমার আবহে থাকত কল্যাণ কাকুর উদাত্ত কন্ঠে গাওয়া রবি ঠাকুরের গান..অথবা মায়ের গলায় বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি। এই সমস্ত বিচ্ছু স্মৃতি গুলো এখন আমার সাথে চু কিত্ কিত্ খেলছে।এই ভরা বাদরে ছুটেও কোত্থাও তাদের  ধরতে পাচ্ছিনা। শুধু জানলার বাইরে এক টুকরো পাহাড়ে  আমার শৈশবের মেঘদূত ভালোবেসে এসে দাড়ালো, এই মাত্র!